(আগামী শনিবার, ২২শে অক্টোবর থেকে শুরু হচ্ছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মূল পর্ব। এই টুর্নামেন্টে যোগ দিতে সবগুলো দলই এখন অস্ট্রেলিয়ায়। এই টুর্নামেন্টে কোন দলের শক্তিমত্তা কেমন, শিরোপা জয়ের পথে কারা এগিয়ে তা নিয়ে আমাদের ধারাবাহিক প্রতিবেদন। দ্বিতীয় কিস্তিতে পড়ুন স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার অবস্থা।)
![]() |
দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটে সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে বড় ঘটনার একটি মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান রাইলি রুশোর ফিরে আসা। |
দক্ষিণ আফ্রিকা দলের জন্য বিশ্বকাপ ইতিহাস কখনোই খুব একটা সুখকর ছিল না।
তারকাবহুল দল এবং ক্রিকেট র্যাংকিংয়ের সেরা ক্রিকেটার নিয়ে এসেও এখনও পর্যন্ত ওয়ানডে বা টি-টোয়েন্টি কোনও বিশ্বকাপেই ফাইনাল খেলতে পারেনি তারা।
গত বছরও নেট রান রেটে পিছিয়ে পড়ে গ্রুপের ছয় দলের মধ্যে তৃতীয় হয়ে টুর্নামেন্ট থেকে বাদ পড়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা।
পাঁচ ম্যাচের ৪ টি জিতেও দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য যথেষ্ট ছিল না।
তবে সংযুক্ত আরব আমিরাতের মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকা এবং অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকা দল, শক্তিমত্তা ও দক্ষতার দিক থেকে ভিন্ন। কিছু ক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে আরও শক্তিশালী।
দক্ষিণ আফ্রিকা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের টি-টোয়েন্টি র্যাংকিংয়ে অবস্থান চার নম্বরে।
বোলিং আক্রমণ- বৈচিত্রময় এবং গতিশীল তবে খরুচে
আনরিখ নরকীয়া, কাগিসো রাবাদা, লুঙ্গি এনগিদি- এই তিনজনই গত বছর কয়েক যাবৎ টপ বোলার হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলছেন।
এর বাইরে দক্ষিণ আফ্রিকার স্কোয়াডে আছেন দুজন বিশেষ স্পিনার। একজন কেশভ মহারাজ, বাঁহাতি বোলার, যিনি ডান হাতি ব্যাটসম্যানদের জন্য বিপদের কারণ হতে পারেন।
আরেকজন তাবরাইজ শামসি - টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম বৈচিত্র্যময় স্পিনার, বাঁহাতি চায়নাম্যান এই বোলার দুই দিকেই বল টার্ন করাতে পারেন, এটা তার বিশেষত্ব।
গত বছরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে ১২ ম্যাচে ১৬ উইকেট নিয়েছেন তাবরাইজ শামসি।
ফাস্ট বোলারদের মধ্যে লুঙ্গি এনগিদি এই সময়ের মধ্যে ৯ ম্যাচে ১৫ উইকেট নিয়েছেন।
তবে এই বোলিং লাইন আপের দুশ্চিন্তার জায়গা হচ্ছে প্রত্যেকেই বেশ খরুচে বোলিং করেছেন সাম্প্রতিক সময়ে।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে কখনো কখনো উইকেট নেয়ার চেয়েও রান কম দেয়া গুরুত্বপূর্ণ হয়ে যায়।
এই একটা জায়গায় নিয়ন্ত্রণ আনতে পারলে দক্ষিণ আফ্রিকার বোলাররা অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারেন যেকোনও প্রতিপক্ষের জন্য।
আরেকটা প্রশ্নের জায়গা তৈরি করছেন তাবরাইজ শামসি, যার সাম্প্রতিক সময়ের ফর্ম খুব একটা ইতিবাচক নয়। সেক্ষেত্রে কেশভ মহারাজকেই স্পিন আক্রমণ সামলানোর দায়িত্ব নিতে হবে।
দক্ষিণ আফ্রিকার গ্রুপে আছে পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও ভারত। এই তিনটি দলই ফাস্ট বোলিং এবং শর্ট বলে অনেক সময়ই নড়বড়ে হয়ে পড়ে।
![]() |
ফাস্ট বোলাররা দক্ষিণ আফ্রিকার শক্তির জায়গা |
রাইলি রুশো
দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটে সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে বড় ঘটনার একটি মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান রাইলি রুশোর ফিরে আসা।
ক্যারিয়ার শুরু হতে না হতেই রুশো দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট চুক্তি বাতিল করে ইংল্যান্ডের কাউন্টি ক্রিকেটের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন ২০১৬ সালে।
ছয় বছর পর চলতি বছরের জুলাই মাসে রুশো দক্ষিণ আফ্রিকার জার্সি গায়ে মাঠে ফিরেছেন।
ফিরেই তিনি কার্ডিফে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৫৫ বলে অপরাজিত ৯৬ এবং ভারতের বিপক্ষে ইন্দোরে কদিন আগেই ৪৮ বলে অপরাজিত ১০০ রানের ইনিংস খেলেছেন।
রুশো এমনই প্রভাব সৃষ্টিকারী একজন ক্রিকেটার, যে তিনি বুঝতেই দেননি এতোগুলো বছর তিনি দলের সাথে ছিলেন না।
ক্রিকেট উপস্থাপক হারশা ভোগলে একটি টুইটে লিখেছেন, দক্ষিণ আফ্রিকা এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দৌড়ে আছে এবং রুশোই এই দলটাকে পারফরম্যান্সের দিক থেকে নেতৃত্ব দেবেন।
দক্ষিণ আফ্রিকার দলে ফিরে রুশো ছয় ম্যাচে ২৩১ রান তুলেছেন, ৫৭ গড় ও দুর্দান্ত ১৮০ স্ট্রাইক রেটে।
ব্যাটিংয়েএ আরও আছেন চার জন ব্যাটসম্যান, গত এক বছরে যাদের কারও স্ট্রাইক রেতি ১৬০ এর নিচে নয়
এরা হচেছন এইডেন মারক্রাম, ডেভিড মিলার হেইনরিখ ক্লাসেন ও ত্রিস্তান স্টাবস।
![]() |
কুইন্টন ডি ককের স্ট্রাইক রেট- গত এক বছরে ১৩৪। |
গত এক বছরে দক্ষিণ আফ্রিকার মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানদের স্ট্রাইক রেট
- এইডেন মারক্রাম- ১৬৮.২৭
- ডেভিড মিলার- ১৮৭.০১
- হেইনরিখ ক্লাসেন- ১৬১.৬০
- ত্রিস্তান স্টাবস- ১৯১.৮৯
কুইন্টন ডি ককের স্ট্রাইক রেট - গত এক বছরে ১৩৪।
![]() |
দক্ষিণ আফ্রিকার ভাবনার জায়গা দলটির অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা |
ভাবনার জায়গা দলটির অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা
বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করেন বাভুমার অধিনায়ক হওয়াতো দূরের কথা একাদশে জায়গাই পাওয়ার কথা না।
সাড়ে তিন মাস আগে ভারতের মাটিতে চোট পেয়েই দল থেকে ছিটকে গিয়েছিলেন বাভুমা, চোট কাটিয়ে ফিরে বাভুমা দেখলেন, রুশো, রিজা হেনড্রিক্সরা পারফর্ম করেই দলে জায়গা পাকা করছেন।
ভ্যান ডার ডুসেনের চোটের কারণে প্রতিযোগিতায় একজন কমেছে কেবল, কিন্তু তবুও প্রশ্ন থাকছেই।
পাঁচ ম্যাচে চারটি ফিফটি করেও বাভুমাকে জায়গা দিতে একাদশের বাইরে থাকতে হচ্ছে রিজা হেনড্রিক্সকে।
ভারতের বিপক্ষে সাম্প্রতিক সিরিজে তিন ইনিংসে বাভুমা করেছেন ০, ০ ও ৩।
গত এক বছরে ৯ ম্যাচ ব্যাট করে ৯৫ রান তুলেছেন টেম্বা বাভুমা, এই সময়ে তার স্ট্রাইক রেট ৮৯।
টেম্বা বাভুমা দক্ষিণ আফ্রিকার নিজস্ব ফ্র্যাঞ্চাইজ টি-টোয়েন্টি লিগেই দল পাননি।
সেদিক থেকে দেশটির জাতীয় টি-টোয়েন্টি দলে তিনি খেলছেন এবং অধিনায়কত্ব করছেন, এই ব্যাপারটা প্রশ্ন তুলছে বিশ্লেষকদের মাঝে।
তবে দক্ষিণ আফ্রিকার কোচ মার্ক বাউচার এখনও আশাবাদী, অন্তত ওয়ার্ম আপ ম্যাচেও যদি টেম্বা বাভুমা কিছু রান করেন, তবে তিনি আত্মবিশ্বাস পাবে বলেই মনে করেন তিনি।
এই দলটির অন্যতম অস্বস্তির জায়গার একটি স্বয়ং কোচ মার্ক বাউচারও। তিনি ২০২৩ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপ পর্যন্ত চুক্তি থাকলেও, চুক্তির প্রায় এক বছর আগেই তিনি চাকরি ছেড়ে টি-টোয়েন্টি লিগের কোচের দায়িত্ব নেবেন, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পরে।
শীর্ষ ফাস্ট বোলার, ফর্মে থাকা স্পিনার, বিশ্বের অন্যতম সেরা বিগ হিটারদের এই দলের এখন মূল কাজ থাকবে সমন্বয়- এই সমন্বয়টাই অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার এই টুর্নামেন্টের যাত্রা ঠিক করে দেবে।